মুমিনদের উৎসাহ দানকারী এক মুসলিম চিকিৎসকের গল্প।।

পবিত্র শরীয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে একটি হলো বান্দার জীবনের সংরক্ষণ, এমনটাই প্রিয় নবী ﷺ বলেছেন, “এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান হারাম” (মুসলিম:-২৫৬৪)।  আর এজন্যেই কিসাসের বিধান (শাস্তি প্রদানে সমতার আইন) দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর রাহে জিহাদের নির্দেশ দেওয়ার অন্যতম কারণও এটি ।

যাইহোক, মৃত্যুদণ্ড এবং যালেমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পাশাপাশি, আরো কিছু উপায়ে মানুষের জীবন বাঁচানো যেতে পারে। এমন একটি উপায় হলো চিকিৎসাবিজ্ঞান। এভাবে চিকিৎসাবিদ্যার জ্ঞান অর্জন ও চর্চা, মুসলিমসম্প্রদায়ের উপর একটি সামাজিক আবশ্যিক কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। নিঃসন্দেহে, মেডিকেল চিকিৎসকরা মুসলিম উম্মাহর এক অপরিহার্য সম্পদ এবং জিহাদের ময়দানে মুজাহিদদের বাঁচাতে ও শত্রুদের আক্রমণে হতাহত সাধারণ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় তাদের দক্ষতার খুব বেশী প্রয়োজন। যাইহোক, দুঃখজনকভাবে, এই চিকিৎসাজগতের খুব কম মানুষই আছেন যারা মুজাহিদীন এবং যেসকল সাধারণ মুসলিম জনগণকে বাঁচাতে মুজাহিদগণ যুদ্ধ করেন, তাদেরকে সহায়তা ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে জিহাদের ময়দানে যোগদান করার মাধ্যমে আল্লাহর দেওয়া এই নি'য়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন।

তাই, আর-রিসালাহ এমন একজন মুসলিম ডাক্তারের কাহিনী বর্ণনা করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত যিনি শামের মুজাহিদ ও মুসলিমদেরকে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ইউরোপ থেকে হিজরত করে এসেছেন। ডাক্তার আহমেদ বলেন: ইউরোপে আরামদায়ক জীবনযাপনের সময়, আমি মিডিয়ার খবরগুলো খেয়াল করতে শুরু করি। যার মধ্যে সিরিয়াতে চিকিৎসক সংকটের খবর লক্ষ্য করার মত; মৃত্যু এবং দুর্ভোগ ঐ ভূমির মুসলিমদের নিত্যদিনের ঘটনা। শরীয়ার দাবি অনুযায়ী, একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তার হিসেবে আমার উপর সিরিয়ার এসমস্ত নিপীড়িত ও অবহেলিত মুসলিমদের অধিকার রয়েছে। আমি অনেক আলেমদের সাথে আলোচনা করেছি, তারা আমাকে জানিয়েছেন যে, যোগ্যতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের এই সংকটপূর্ণ অবস্থায় আমার ও আমার ন্যায় অন্যান্য ডাক্তারদের উপর সিরিয়াতে হিজরত করা ফরজ, যাতে আমরা তাদের তীব্র বেদনাদায়ক শূন্যস্থানগুলো পূরণ করতে পারি।

প্রকৃতপক্ষে, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটা আমার উপর অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব; কেননা, জিহাদ এখন ফরজে আইন, যেহেতু সিরিয়ার মুসলিমদের জন্য এখন সার্জন, ডক্টর, নার্স এবং অন্যান্য দক্ষ পেশাজীবিদের ভীষণ অভাব রয়েছে । পাশাপাশি, যেহেতু পশ্চিমাদের মুসলিম মেডিকেল পেশাজীবীর কোন চাহিদা নেই, তাই মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে ইসলামের শত্রুদের চেয়ে বরং মুসলিমরাই আমার সেবা পাওয়ার বেশি হকদার। বিশ্বের সর্বত্র যেমন- শাম, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, ইয়েমেন ও আরো অসংখ্য  দেশের মুসলিমরা যখন প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার মারাত্মক সংকটে দিন কাটাচ্ছে, তখন ইউরোপে বসে থাকার মত এত বড় গুনাহের ভার আমি কিছুতেই বহন করতে পারছিলাম না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, সিরিয়াতে অবস্থানরত দক্ষ চিকিৎসকরা, একে একে আল্লাহ এবং মুসলিমদের প্রতি তাদের কর্তব্য পালনে পিঠ দেখিয়েছে । তারা একটি 'উত্তমজীবন'-এর আশায় ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে – যার জন্য তাদেরকে শেষবিচারের দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহ আমাকে এতটুকু জ্ঞানলাভের সুযোগ করে দিয়ে আমার উপর রহম করেছেন যে, আমি আমার প্রতি আমার রবের হক সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং এই পবিত্রভূমির জনগণকে সেবা প্রদানের সুযোগ করে দিয়ে তিনি আমাকে যে দয়া করেছেন, আমি এই অসীম দানের কৃতজ্ঞতা আদায়ের লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার ভাই-বোনদের দিকে ফিরে তাকালে দেখি, তারা আতংকে মরে যাচ্ছে, এটা যে কেবল মহান আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনতা-ই নয়, বরং এটা মুনাফিকেরও নিদর্শন বহন করে, আল্লাহ তা'আলার আয়াত থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়:

"এবং তাদের মধ্যে কিছু লোক আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছিল: ‘যদি তিনি (আল্লাহ) আমাদের উপর অনুগ্রহ করেন, তবে আমরা অবশ্যই দান করব এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।' অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ দান করলেন, তারা তাতে কার্পণ্য করল এবং কৃত ওয়াদা থেকে বিমুখ হয়ে ফিরে গেল। সুতরাং পরিণামে তিনি তাদের অন্তরে নিফাক রেখে দিলেন সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা তাঁর(আল্লাহর) সাথে সাক্ষাৎ করবে, তারা আল্লাহকে যে ওয়াদা দিয়েছে তা ভঙ্গ করার কারণে এবং সে কারণে যে, তারা মিথ্যা বলেছিল।" [আত-তাওবাহ ৭৫-৭৭]

সুতরাং আমি উম্মাহর প্রতি আমার সেবাপ্রদানের এই দায়িত্বকে উপেক্ষা করতে পারিনি। আমি যে এলাকাতে কর্মরত আছি, সেখানে সিরিয়ান ও আমেরিকান যুদ্ধবিমানগুলো সাধারণত বিকালে বিমানহামলা শুরু করে; তাই, আমরা এটি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি যে, এই সময়টার জন্য আমরা প্রস্তুত। যখন কোন বিমানহামলা হয়, আমরা কমপক্ষে ৩০জন হতাহতকে গ্রহণ করার আশংকা করি, অথচ একসাথে আমাদের মাত্র ৬টা ইমার্জেন্সি কেস (জরুরি পরিস্থিতি) সামাল দেবার মত সক্ষমতা আছে। যখনই আমরা কোন বিমানহামলার শব্দ শুনতে পাই, তৎক্ষণাৎ আমরা জরুরিবিভাগে দ্রুত যাই এবং সবচেয়ে মুমূর্ষু রোগীর জন্য প্রস্তুত হই। কিছু কিছু এলাকায়, দিনে ১২ বারেরও বেশি বিমান হামলার ঘটনা ঘটে, যার সবগুলোই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা। যাইহোক, মাঝে মাঝে,  কোন এলাকায়, বিশেষ করে আলেপ্পোতে এত বেশি বিমানহামলা হয় যে, তা একদিনে আনুমানিক ৫০ থেকে ৭০ বারের মত হয়। এই বর্বর যুদ্ধকৌশলের পরিণামস্বরূপ, যে ব্যাপক ধ্বংসলীলা ও হত্যাযজ্ঞ সাধিত হয় তার কল্পনার ধারে কাছেও আপনারা যেতে পারবেন না; এমন অসংখ্য কাহিনী আছে, যার সবগুলোরই বর্ণনা অত্যন্ত ভয়ংকর এবং হৃদয়বিদারক। দিন দিন দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন মেডিকেল স্টাফ এবং চিকিৎসাযন্ত্রাদির চাহিদা আরো তীব্র আকার ধারণ করছে। আমরা ঘাটতির মুখোমুখি হওয়ার কারণে, আমাকে অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা করতে হচ্ছে; একদিন আমাকে জেনারেল সার্জনের ভূমিকায় কাজ করতে হচ্ছে, পরদিন আবার শিশুচিকিৎসকের ভূমিকায় কাজ করতে হচ্ছে, আবার পরদিন আমাকে কার্ডিওলজিস্টের (হৃদরোগ) ভূমিকা নিতে হচ্ছে। আমাদের আসলে এরকম যোগ্যতাসম্পন্ন কোন ডাক্তার নেই; যাইহোক, এই হল সিরিয়ার মুসলিমদের 'জীবন', যাদের কথা কেউ মনে রাখে না। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের একদল ভাইয়েরা আছে, যারা তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে, কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, তাদের কেউই যোগ্যতাসম্পন্ন নয়। অতএব, আমরা ( অল্প কয়েকজন যোগ্যতাসম্পন্ন ডাক্তার) যতজনকে সম্ভব প্রশিক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করি, আর তারপর আমরা মহান আল্লাহর উপর ভরসা করি এবং আমাদের সমস্ত কাজগুলোকে তাঁর উপর ন্যস্ত করি, তিনি মহান ও সর্বজ্ঞানী। আল্লাহর কসম, আহতদের একটা বিশাল অংশ নারী ও শিশুদের মধ্য থেকে। সিরিয়ার অসহায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে আসাদ এবং তার রাশিয়ান চরদের কৃত এই সীমালঙ্ঘন হচ্ছে তাদের একটা সাধারণনীতি(পলিসি)। নির্বিচারে নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের টার্গেট করার মাধ্যমে, এই সন্ত্রাসীরা জনগণকে তাদের স্বীয় পিতা, ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে নিতে চায় যারা এই স্বৈরাচারী ও যালেমদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করেছেন; যাইহোক, "তারা চক্রান্ত করছে, আর আল্লাহও পরিকল্পনা করছেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম।” [আল-'ইমরান:৫৪]

প্রকৃতপক্ষে, “ কাফেররা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, যাতে তারা সবাইকে  মহান আল্লাহর পথ হতে ফিরিয়ে রাখতে পারে। আর তারা ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর তা তাদের আক্ষেপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং তারা পরাভূত হবে। আর, যারা কুফুরি অবলম্বন করেছে তাদের সবাইকে জাহান্নামের পাশে একত্রিত করা হবে।”

[আল-আনফাল:৩৬]

 “তুমি হয়ত কোনদিন কোন গরীব লোককে সাহায্য করেছিলে অথবা কোন এক দুঃখক্লিষ্ট ব্যক্তিকে খুশী করেছিলে কিংবা কোন পীড়িত ব্যক্তির বেদনা দূর করেছিলে, তোমার অজান্তেই একদিন হয়ত এগুলোই তোমার জান্নাতে যাওয়ার কারণ হবে। সুতরাং, কোন ভাল কাজকেই তুচ্ছ মনে করো না।”

-ইবনুল কায়্যিম

আপনাদের নেক দু‘আয় আমাদের ভুলবেন না।

I BUILT MY SITE FOR FREE USING